ডেস্ক রিপোর্ট – গত ৫ এপ্রিল লে. কর্নেল আহমেদ ইউসুফ জামিল বাংলাদেশের মিডিয়াকে বলেন যে সিলেটে ইয়াবার একটি চালান জব্দ করা হয়েছে। এই মাদক মিয়ানমারে উৎপাদিত হয়ে ভারতের মধ্য দিয়ে পাচার হয়ে আসছিলো। বাংলাদেশে পাচারের উদ্দেশ্যে ভারতে ইয়াবার বেশ কয়েকটি চালান জব্দ হওয়ার পর তিনি এ মন্তব্য করলেন। এতে বোঝা যাচ্ছে ত্রিপুরা, আসাম ও মেঘালায় সীমান্তে বেশ কয়েকটি স্থান দিয়ে এসব মাদক পাচার হয়ে থাকে।
মেথামফেটামাইন ও ক্যাফেইনের মিশ্রণে তৈরি ইয়াবা প্রথম আবিষ্কার করেন জাপানি রসায়নবিদ আকিরা ওগাতা, ১৯১৮ সালে। বর্তমানে বেশির ভাগ ইয়াবা তৈরি হয় চীন সংলগ্ন মিয়ানমারের শান রাজ্যে। স্থানটি নিয়ন্ত্রণ করে বিদ্রোহী গ্রুপ ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মি। তারা ১৯৮৯ সালে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর সাথে শান্তিচুক্তি করেছিল। এছাড়া গোলযোগপূর্ণ রাখাইন রাজ্য ও স্যাগাইন বিভাগেও কয়েকটি ইয়াবা কারখানা থাকতে পারে।
বাংলাদেশের সাথে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর ১,৮৮০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। সমতল ভূমি ছাড়াও পাহাড়, নদী ও বনভূমিতেও সীমান্ত রয়েছে। এর ফলে উভয় দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর জন্যই চোরাচালান প্রতিরোধ করা খুবই কঠিন কাজ। ভারত সরকার সীমান্তে বেড়া দিলেও অনেক ফাঁক ফোঁকর রয়ে গেছে। দুই দেশের সীমান্ত বাহিনীর সভায় মাদক চোরাচালান সবসময়ই প্রাধান্য পায়।
গত তিন বছরের কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, বাংলাদেশে মিয়ানমারের ইয়াবা পাচারের জন্য দুটি রুট সবচেয়ে সক্রিয়। সবচেয়ে ব্যবহৃত রুটটি হচ্ছে মিজোরাম দিয়ে। বিশেষ করে চাম্পাইয়ের সাথে মিয়ানমারে তিদ্দিম ও মান্দালয়ের মতো শহরের সাথে বেশ ভালো যোগাযোগ রয়েছে। এসপি টি স্যালিও বলেন, গত বছর রাজ্য বিধান সভার নির্বাচনের আগে ১৬০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ইয়াবা আটক করা হয়।
আরেকটি রুট হলো মনিপুর দিয়ে। এর সাথে মিয়ানমারে স্যাগেইঙ বিভাগের যোগাযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশে দমন অভিযান শুরু হওয়ার পর এসব রুট দিয়ে মাদক পাচার হয় বেশি করে। বাংলাদেশে গত বছর শুরু হওয়া অভিযানে দুই শতাধিক মাদক কারবারি নিহত হয়, প্রায় আড়াই হাজারকে আটক করা হয়, শতাধিক ইয়াবা গডফাদারকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করা হয়।
কিন্তু তারপরও মাদক পাচার পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। কক্সবাজার দিয়ে অনেক রুট এখনো সক্রিয়।
ভারতের অনেক কর্মকর্তা মনে করেন, এসব রুট দিয়ে ইয়াবার পাশাপারি আরো অনেক নিষিদ্ধ পণ্য পাচার হয়। এমনকি হেরোইনও এসব রুট দিয়ে পাচার হয়ে থাকে বলে পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন।
পাচারের যে চিত্র পাওয়া যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে যে এই কাজে বড় বড় দুর্বৃত্ত দল জড়িত। তারা বেশ আটঘাট বেঁধেই একাজ করছে।
গত বছরের ২৮ মার্চ আসামের মানকাচরে ইয়াবা ট্যাবলেটসহ দুই পাচারকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তারা জানান, তারা প্যাকেটগুলো পেয়েছিলেন মেঘালয় রাজ্যে স্থানীয় এক কারবারির কাছ থেকে। এসব মাদক কোথা থেকে আসছে, তা তারা জানতেন না। কোনো রুটে নজরদারি বাড়ানো মাত্র পাচারকারীরা অন্য রুটের ব্যবস্থা করে। বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত জেলাগুলোতে দারিদ্র অবস্থার কারণে স্থানীয় পাচারকারী পাওয়া খুব কঠিন হয় না।
তবে ইয়াবাই নয়, ভারত হয়ে বাংলাদেশে অন্যান্য মাদকও পাচার হয়। এর একটি হলো নিষিদ্ধ ফেনসিডিল। ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের কয়েকটি রাজ্যের ল্যাবরেটরিতে এসব ফেনসিডিল উৎপাদিত হয়। এতে লাভও হয় অনেক বেশি। কর্তৃপক্ষ বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিলবাহী অনেক ট্রাকও আটক করেছে সীমান্তের কাছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-